৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বন্ধ হয়ে যায় যুক্তরাজ্যের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র র্যাটক্লিফ-অন-সোয়ার পাওয়ার স্টেশন (Ratcliffe-on- Soar Power Station) যা চালু হয় ১৯৬৭ সালে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধের মধ্য দিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১৪২ বছরের ইতিহাসের পর্দা নামে। এছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা শেষ করে যুক্তরাজ্য।
কয়লার বদলে দেশটি প্রাকৃতিক গ্যাস, পারমাণবিক শক্তি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে G7 ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম যুগান্তকারী এ পদক্ষেপ নেয় দেশটি। যুক্তরাজ্য হলো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের জন্মস্থান। ১৮৮২ সালে টমাস আলভা এডিসন উদ্ভাবিত বিশ্বের প্রথম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হলবন ভায়াডাক্ট পাওয়ার স্টেশন। এটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে অবস্থিত।
কয়লা
কয়লা কালো বা কালচে বাদামি রঙের এক ধরনের পাললিক শিলা। এতে বিদ্যমান মূল উপাদান কার্বন। এটি অ-নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যতম উৎস। মূলত কয়লা পুড়িয়ে তাপ উৎপন্ন করা হয়। এরপর সেই তাপকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয় বিদ্যুৎ শক্তি। পৃথিবীজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানি হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কয়লার ব্যবহার।
উৎপত্তি : গাছ হাজার বছর মাটি চাপা থাকার পর পরিণত হয় কয়লায়। কয়লা তিন প্রকারের হয়। যেমন— অ্যানথ্রাসাইট, বিটুমিনাস এবং লিগনাইট। প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে কার্বোনিফেরাস যুগে গাছ- পালা পানির নিচে পচে পিট অবস্থায় রূপান্তরিত হয়। একটা সময় পিটে পরিণত হয় লিগনাইটে। এরপর পানির প্রবাহ, স্রোত ও ভূমির পরিবর্তনের ফলে লিগনাইটের উপরে জমে আরও শক্ত মাটির আস্তরণ পড়ে।
ফলে লিগনাইট থেকে সাব-বিটুমিনাস এবং বিটুমিনাস কয়লা তৈরি হয়। ক্রমাগত তাপ ও চাপের বৃদ্ধির ফলে বিটুমিনাস থেকে অ্যানথ্রাসাইট তৈরি হয়। তাপ এবং চাপ আরও বাড়তে থাকলে অ্যানথ্রাসাইট পরিণত হয় গ্রাফাইটে। সর্বশেষ পর্যায়ে গ্রাফাইট থেকে তৈরি হয় হীরা।
কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন
খনি থেকে প্রচুর পরিমাণ কয়লা সংগ্রহ করে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়। সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের কয়লাগুলো বেছে নিয়ে সেগুলোকে বয়েলার মেশিনে পাঠানো হয়। এ মেশিনের নিচের অংশে কয়লা জ্বালানো হয় এবং মেশিনের উপরের অংশে অসংখ্য পাইপ থাকে যেগুলো পানিতে পূর্ণ থাকে।
উপরের পাইপ গুলোতে পানি বাষ্পে পরিণত হতে থাকলে, সেই বাষ্পকে একত্রিত করে টারবাইন ফ্যান পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়। প্রচণ্ড চাপযুক্ত বাষ্প খুব দ্রুতগতিতে টারবাইন ফ্যানের মধ্যে দিয়ে যাওয়াই ফ্যানটি দ্রুতগতিতে ঘুরতে শুরু করে। টারবাইন ফ্যানটি জেনারেটরের সঙ্গে যুক্ত থাকায় এর মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে থাকে।
জানা-অজানা
- বেলজিয়াম ইউরোপের প্রথম কয়লা মুক্ত দেশ, দেশটি ২০১৬ সালের মার্চে সর্বশেষ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে।
- বিশ্বের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র Tuoketuo Power Station (চীন), উৎপাদন ক্ষমতা ৬,৭২০ মেগাওয়াট (প্রায়)।
- কয়লা ব্যবহারে শীর্ষ দেশ চীন।
শিল্প বিপ্লব
আঠারো শতকের শেষার্ধে শিল্পোৎপাদনের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডে যে- বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয় সাধারণভাবে তা শিল্প বিপ্লব (Industrial Revolution) নামে পরিচিত। শিল্প বিপ্লব কথাটি পরিচিতি লাভ করে ১৮৮১ সালে ইংরেজ ঐতিহাসিক আর্নল্ড জে. টয়েনবি কর্তৃক অক্সফোর্ডে প্রদত্ত on the Industrial Revolutions of the 18th Century in England শীর্ষক বক্তৃতার মাধ্যমে ।
শিল্প বিপ্লব | সময়কাল | আবিষ্কার |
প্রথম | ১৭৫০-১৮৫০ | কয়লার খনি, বাষ্পীয় ইঞ্জিন |
দ্বিতীয় | ১৮৭০-১৯১৪ | বিদ্যুৎ |
তৃতীয় | ১৯৬০-১৯৯০ | ট্রানজিস্টর ও ইন্টারনেট |
বর্তমানে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব চলছে। |
কয়লা ও প্রথম শিল্প বিপ্লব
১৭০০ শতকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া প্রথম শিল্প বিপ্লব ব্রিটেনকে একটি অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত করে এবং দেশটির জনগণের দৈনন্দিন জীবন পরিবর্তন করে। তখন ব্রিটেনে প্রচুর পরিমাণ শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে। এ সমস্ত শিল্পের শক্তির জন্য বিপুল পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয়। এ সকল শক্তির যোগান কয়লা থেকে দেওয়া হতো। ১৭০০ সালে ইংল্যান্ডে প্রতি বছর প্রায় ৩ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করা হয়। ১৮৩০ সালের পর এটি ৩০ মিলিয়ন টনের বেশি হয় ।